Menu
Menu

আলো মুঞি জানো না

জ্ঞানদাস  । পূর্বরাগ

আলো মুঞি জানো না—
জানিলে যাইতাম না কদম্বের তলে।
চিত মোর হরিয়া নিল ছলিয়া নাগর ছলে।।
রূপের পাথারে আঁখি ডুবি সে রহিল।
যৌবনের বনে মন হারাইয়া গেল।।
ঘরে যাইতে পথ মোর হৈল অফুরাণ।
অন্তরে বিদরে হিয়া কিবা করে প্রাণ।।
চন্দন চান্দের মাঝে মৃগমন্দ ধান্ধা।
তাঁর মাঝে পরাণ পুতলি রৈল বান্ধা।।
কটি পীতবসন রসনা তাহে জড়া।
বিধি নিরমিল কুল-কলঙ্কের কোঁড়া।।
জাতি কুল শীল সব হেন বুঝি গেল।
ভুবন ভরিয়া মোর ঘোষণা রহিল।।

আলোচনা

আলোচ্য পদে কৃষ্ণের রূপ বর্ণনাই প্রাধান্য পেয়েছে।

জ্ঞানদাস কৃত ‘পূর্বরাগ’ পর্যায়ভুক্ত এই পদটিতে কৃষ্ণরূপ দর্শনের ফলে রাধা-হৃদয়ের প্রগাঢ় অনুভূতি এবং মানসিক প্রতিক্রিয়ার আশ্চর্য সুন্দর রূপায়ণ ঘটেছে। সখীদের সঙ্গে রাধা যমুনায় জল আনতে গিয়ে কৃষ্ণকে আকস্মিক ভাবে দর্শন করেন। কৃষ্ণের অসাধারণ রূপসৌন্দর্যে বিমোহিত শ্রীমতীর হৃদয়দেশে সুতীব্র আলোড়ন শুরু হয়। সে এক আশ্চর্য অনুভূতি, অপূর্ব শিহরণ। নাগর যেন ছলনা করে রাধার মন চুরি করেছেন। এখন রাধার বিষম সমস্যা। তাঁর দেহধর্ম, কুলধর্ম—সব ধুলিসাৎ হয়ে যেতে বসেছে। গৃহের প্রতি রাধার আকর্ষণ এখন ক্রমশ ক্ষীয়মান। শুধু প্রাণ-বন্ধুর জন্য প্রেমে তাঁর অন্তর উথাল পাথাল করছে। এমন কি যে হল, এতে রাধার দোষ কোথায় ? শ্যামের কপালে চাঁদের মতো চন্দনের টিপ, তার মধ্যে মৃগমদের বিন্দু। ওই বিন্দুই যে রাধিকার চিত্তকে আকৃষ্ট করে টিপের গোলকধাঁধার মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে। গোলকধাঁধায় একবার ঢুকলে বেরিয়ে আসবার পথ খুঁজে পাওয়া যায় না। রাধার দুটি নয়ন কৃষ্ণের রূপের পাথারে ডুবে গেল। কৃষ্ণের যৌবন-অরণ্যের গহনে তাঁর মন হারিয়ে গেল। অথচ রাধা কুলকন্যা, কুলবধূ। কুলবতী সতী হয়েও তিনি দু-কুলেই দুঃখ দিলেন। এখন দৃঢ়চিত্তে শ্যামের প্রতি অনুরক্ত থাকা ছাড়া রাধার আর গত্যন্তর নেই। 

আরো পড়ুন :  দাঁড়াইয়া নন্দের আগে গােপাল কান্দে অনুরাগে

error: Content is protected !!