Menu
Menu

শ্রীদাম সুদাম দাম  শুন ওরে বলরাম

বলরাম দাস । বাৎসল্য রসের পদ

শ্রীদাম সুদাম দাম  শুন ওরে বলরাম
মিনতি করিয়ে তো সভারে।
বন কত অতিদূর  নব তৃণ কুশাঙ্কুর
গোপাল লৈয়া না যাইহ দূরে।।
সখাগণ আগে পাছে  গোপাল করিয়া সাথে
ধীরে ধীরে করিহ গমন।
নব তৃণাঙ্কুর আগে   রাঙা পায় যদি লাগে
প্রবোধ না মানে মায়ের মন।।
নিকটে গোধন রেখো  মা বলে শিঙ্গাতে ডেকো
ঘরে থাকি শুনি যেন রব।
বিহি কৈলা গোপ জাতি  গোধন পালন বৃত্তি
তেঞি বনে পাঠাইয়া দিব।।
বলরাম দাসের বাণী  শুন ওগো নন্দরানী
মনে কিছু না ভাবিহ ভয়।
চরণের বাধা লৈয়া  দিব আমরা যোগাইয়া
তোমার আগে কাহিনু নিশ্চয়।।

আরো পড়ুন :  এ সখি হামারি দুঃখের নাহি ওর

আলোচনা

বলরাম দাসের আলোচ্য পদটি বাৎসল্য রসের। এই পদটিতে মাতৃহৃদয়ের স্নেহ ব্যাকুলতা অতি সহজ অনাড়ম্বর অথচ মর্মভেদী সুরে ধ্বনিত হয়েছে। মা যশোদা গোপালকে গোচারণে পাঠাতে আশঙ্কিত হচ্ছেন। তাই তার সহচরদের তিনি নানাভাবে সাবধান করে দিচ্ছেন যে, তারা যেন গোপালের নিরাপত্তার জন্য সচেষ্ট থাকে। নব কুশাঙ্কুরময় পথে বা অতিদূর বনে তারা যেন গোপালকে নিয়ে না যায়। কেননা কুশাঙ্কু রাখাতে কোমল ও রাঙ্গা পায়ে কিছু হলে গোপাল কষ্ট পাবে। দূর বনে কোনও বিপদ আপদ ঘটলে মা জানতে পারবেন না। 

মা যশোদা নিজ সন্তানের জন্য এতটা উদ্বিগ্ন যে, তিনি পথ চলার সময় গোপালকে মাঝখানে রাখতে বলেন। কারণ তিনি জানেন, কুশাঙ্কুর ছাড়া ‘মাঠে বড়ো রিপুভয় আছে’। নেহাৎ পেশাগত প্রয়োজনে সন্তানকে বনে পাঠাতে হয়। অন্য উপায় থাকলে যশোদা কিছুতেই গোপালকে কাছছাড়া করতেন না। অতি বাৎসল্য বোধের কারণে যশোদাকে এখানে কিছুটা স্বার্থপরের মতো আচরণ করতে দেখা যায়। এখানে বলরাম গোপালের রাঙ্গা পায়ে পাদুকা যোগানের কথা বললেও, তাতে মাতৃ-হৃদয় কতটা শান্ত হয়েছে, অনুমানের বিষয়। পদটিতে চিরন্তন মাতৃহৃদয়ের আকুল চিত্র উদ্ভাসিত।

আরো পড়ুন :  মাধব কি কহব দৈব বিপাক

error: Content is protected !!