Menu
Menu

সই কেবা শুনাইল শ্যামনাম

চণ্ডীদাস । পূর্বরাগ

সই, কেবা শুনাইল শ্যামনাম।
কানের ভিতর দিয়া  মরমে পশিল গাে 
আকুল করিল মাের প্রাণ।। 
না জানি কতেক মধু  শ্যাম নামে আছে গো 
বদন ছাড়িতে নাহি পারে।
জপিতে জপিতে নাম  অবশ করিল গাে
কেমনে পাইব সই তারে।।
নাম পর তাপে যার   ঐছন করিল গো
অঙ্গের পরশে কিবা হয়।
যেখানে বসতি তার   নয়নে দেখিয়া গাে
যুবতী ধরম কৈছে রয়।।
পাসরিতে করি মন   পাসরা না যায় গো
কি করিব কি হবে উপায়।
কহে দ্বিজ চণ্ডীদাসে   কুলবতী কুলনাশে 
আপনার যৌবন যাচায় ।।

আলােচনা : 


চণ্ডীদাস কৃত পূর্বরাগের এই পদটিতে রাধার কৃষ্ণানুরাগের প্রথম অবস্থা এবং সেই স্তরেই সেই অনুরাগের গুঢ়তা ও গাঢ়তার সুস্পষ্ট প্রকাশ লক্ষ করা যায়। মিলনের পূর্বে দর্শন বা শ্রবণের দ্বারা যে রাগ হৃদয়ে অনুভূত হয়, তাই পূর্বরাগ। এক্ষেত্রে শুধু নাম শ্রবণের ফলে রাধার মনের সূক্ষ্ম ক্রিয়ার অনুরণন প্রতিফলিত হয়েছে। রাধা শুধু কৃষ্ণ নাম শ্রবণ করেছেন, তাতেই তিনি বিহ্বলা, আত্মহারা। তাতেই তাঁর প্রাণময় আকুল। নামেরই যদি এরূপ প্রতাপ তাহলে সেই নামের অধিকারীকে চাক্ষুষ দেখতে পেলে তাে রাধা যুবতী ধর্ম বজায় রাখতে পারবেন না। তার অঙ্গ স্পর্শ করলে তাে আর কথাই নয়। এখনাে  রাধার দেহাবেশ, পার্থিব চিন্তা রয়েছে। তাই সব সর্বনাশের মূল কৃষ্ণকে তিনি ভুলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। এ এক অদ্ভূত অবস্থা। সেই নিষ্ঠুর নট কালিয়া যেন যুবতী ধর্ম নাশ করে নিজের যৌবনের আকর্ষণ শক্তি ও চমৎকারিত্ব কতটা তা যাচাই করে নেবেন।
এই পদটি পূর্বরাগের, অর্থাৎ প্রেমের প্রথম অবস্থার। কিন্তু কার্যত নায়িকার দশদশার চরম অবস্থার স্তরে রাধারানী উন্নীত হয়েছেন। কৃষ্ণ প্রেমে মাতােয়ারা মহাভাব স্বরূপিনী শ্রীরাধার অমৃতময়ী শ্রীমূর্তি যেন আমরা এই পদে দেখতে পাই। পদটি গভীর অনুভব রসে সিক্ত।

আরো পড়ুন :  মাধব কি কহব দৈব বিপাক

error: Content is protected !!