Menu
Menu

কি মােহিনী জান বঁধু কি মােহিনী জান

কি মােহিনী জান বঁধু কি মােহিনী জান । চণ্ডীদাস । আক্ষেপানুরাগ

‘কি মােহিনী জান বঁধু কি মােহিনী জান’ মূল পদ


কি মােহিনী জান বঁধু কি মােহিনী জান। 

অবলার প্রাণ নিতে নাহি তােমা হেন।।
 
ঘর কৈনু বাহির বাহির কৈনু ঘর। 

পর কৈনু আপন আপন কৈনু পর।।
 
রাতি কৈনু দিবস  দিবস কৈনু রাতি।
 
বুঝিতে নারিনু বঁধু তােমার পিরীতি।।
 
কোন্ বিধি সিরজিল স্রোতের শেওলি।
 
এমন ব্যথিত নাহি ডাকে বন্ধু বলি।।

বঁধু যদি তুমি মােরে নিদারুণ হও।
 
মরিব তােমার আগে দাঁড়াইয়া রও।। 

বাশুলী আদেশে দ্বিজ চণ্ডীদাস কয়। 

পরের লাগিয়ে কি আপন পর হয়।।

আলােচনা


পদটি আক্ষেপানুরাগের। কৃষ্ণের প্রতি আত্যন্তিক অনুরাগের আবেগে রাধা মনে মনে আশঙ্কিতা হন যে, তার সুগভীর প্রেমের যথােচিত মর্যাদা তিনি পাচ্ছেন না। কৃষ্ণ বুঝি তাঁকে অনাদর করছেন। এই ভাবনার ফলে শ্রীমতীর যত খেদোক্তি প্রকাশ পায়। তার মনােযন্ত্রণা এতই যে, যার জন্য তিনি সমাজ, সংসার আত্মসুখ, গৃহধর্ম সব ছেড়ে পথে এসে দাঁড়িয়েছেন, সেই কালাই আজ রাধার প্রেমকে, তার ত্যাগ-তিতিক্ষাকে যথােচিত মর্যাদা দিচ্ছেন না। অথচ একদিন তাে কৃষ্ণ তার জাদুকরী আকর্ষণ শক্তির দ্বারাই অবলা নারী শ্রীরাধাকে ঘরছাড়া করেছেন। শ্রীমতী তাে কৃষ্ণ বই অন্য কিছু জানেন না। অথচ কৃষ্ণের কাছে আশ্রয় না পেয়ে শ্রীরাধার এখন স্রোতের শেওলার মতাে অবস্থা। যার প্রেম সম্বল করে রাধার কুল ছেড়ে গােকুলের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়া, সেই কৃষ্ণ আজ রাধা থেকে কত দূরে। ফলে এ জগতে এখন রাধার দাড়ানাের ঠাঁই নেই।

আরো পড়ুন :  মন্দির বাহির কঠিন কপাট

এ বিশ্বসংসারে তিনি একেবারে নিঃসঙ্গ ; সমবেদনা জানানাের জন্যও তাঁর কেউ নেই। কেন না যার ভরসায় তিনি সখীজন, আখীয়পরিজন ত্যাগ করেছেন, সেই কৃষ্ণের অনাদরই তাে এখন তার ভাগ্যে জুটছে। শেষ পর্যন্ত শ্রীমতী কালাকে জানালেন যে, তাঁর প্রতি নিষ্ঠুর কালার এমন অনাদর, উপেক্ষা যদি চলতে থাকে তাহলে তার সামনেই শ্রীমতী আত্মহত্যা করে একদিকে তার অন্তহীন দুঃখের অবসান ঘটাবেন এবং কানুকে তার সুগভীর ভালােবাসার প্রমাণ দেবেন। অন্যদিকে শ্ৰীমতীকে অনাদরের কারণে কানুকে তিনিও যথােচিত দুঃখ দেবেন। বস্তুত, কানুর প্রতি শ্রীমতীর এরূপ আক্ষেপ আত্যন্তিক অনুরাগের কারণে। কানুর প্রতি তার ভালােবাসা নিখাদ এবং সর্বত্যাগী বলেই শ্রীরাধা তার প্রেমের বিন্দুমাত্র অনাদর কল্পনাও করতে পারেন না। এই পদে কানু প্রেমের জাদুকরী আকর্ষণ শক্তি, অন্যদিকে শ্রীমতীর কানুর প্রতি সুগভীর প্রেম সহজ, সরল, অথচ ব্যঞ্জনা-গর্ভ শিল্পকৌশল স্পষ্টরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। চণ্ডীদাস যে মহত্তম আবেগের সহজতম ভাষায় প্রকাশের নিপুণ কবি, আলােচ্য পদটি তার সার্থক উদাহরণ।

আরো পড়ুন :  রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভাের

Table of Contents

error: Content is protected !!